আজ বুধবার, ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে জেএসসি পরীক্ষার্থীকে জবাই করে হত্যা,আটক-১

তুহিন মোল্লা,রূপগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় প্রিয়াংকা (১৪) নামে এক জেএসসি পরীক্ষার্থীকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার বেলা ১১ টায় উপজেলার তারাব পৌরসভার বরাব কবরস্থান এলাকা থেকে ওই পরীক্ষার্থীর জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মাসুম মিয়া (২০) নামে এক যুবককে আটক করা হয়। নিহত প্রিয়াংকা উপজেলার বরাব এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী মহিউদ্দিনের মেয়ে। তিনি স্থানীয় হাজী আয়েত আলী ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত শনিবার প্রাইভেট পড়তে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। ওই দিন রাতের যেকোন সময় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। আটক মাসুম মিয়া টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর থানার ওমর আলীর ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল হক জানান, বরাব কবরস্থান এলাকার দুই বাড়ির সীমানা প্রাচীরের পানির ড্রেনে পড়ে থাকা জেএসসি পরীক্ষার্থী প্রিয়াংকার জবাই করা লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। কে বা কারা রাতের যে কোন সময় প্রিয়াংকাকে জবাই করে হত্যার পর এখানে ফেলে রেখে যায়।

প্রিয়াংকার পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যুবক মাসুম মিয়া বরাব এলাকায় বসবাস করে ম্যাক্স সুয়েটার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছে। গত এক বছর ধরে প্রিয়াংকাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আসছে যুবক মাসুম। মাসুম মাদকাসক্ত হওয়ায় প্রিয়াংকাসহ পরিবারের সদস্যরা তা মেনে নিতে পারেনি। এসব বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার সালিশও হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে প্রিয়াংকা প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। বিকেলের মধ্যে বাড়িতে ফেরার কথা থাকলেও আর বাড়ি ফিরেনি। প্রিয়াংকার পরিবারের দাবি, নানা কৌশলে প্রিয়াংকাকে তুলে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মাসুমসহ তার লোকজন।
প্রিয়াংকার মেঝো ভাই রাকিব আহম্মেদ প্রত্যক্ষদর্শী তার এক বন্ধুর বরাত দিয়ে বলেন, শনিবার বিকালে তার বোন প্রাইভেট পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এসময় তার বন্ধু এক মেয়ের সঙ্গে রিকসাযোগে প্রিয়াংকাকে যেতে দেখে। এরপর থেকে প্রিয়াংকা নিখোঁজ।
স্থানীয় এলাকাবাসী আরো জানায়, যেখানে প্রিয়াংকার লাশ পাওয়া গেছে, ঠিক এর পাশেই তাদের বাড়ি। পাশের বাড়ির ওয়ালে ছোপ-ছোপ রক্তের দাগ দেখা গেছে। পাশের একটি পরিত্যক্ত বাড়ির ছাদে প্রিয়াংকার ব্যবহৃত স্যান্ডেলের সন্ধানও মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পরিত্যক্ত বাড়িতে বখাটে যুবক মাসুমসহ তার লোকজন প্রিয়াংকাকে জবাই করে হত্যা করে ফেলে রেখে গেছে।
বাবা মহিউদ্দিন, মা নাছিমা, বোন আমেনাসহ পরিবারের সদস্যরা প্রিয়াংকাকে হারিয়ে প্রায় পাগল হয়ে গেছে। মহিউদ্দিনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাবা মহিউদ্দিন বলেন, আমার ইচ্ছে ছিলো প্রিয়াংকাকে উচ্চ লেখা-পড়া করিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই ইচ্ছা আর পুরন হলোনা।

প্রিয়াংকাকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজী আয়েত আলী ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝেও শোক বয়ে এসেছে। হাজী আয়েত আলী ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হোসনে আরা পারভিন বলেন, প্রিয়াংকা একজন ভালো ছাত্রী ছিলো। সকল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রিয়াংকা লেখা-পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ব্যস্ত সময় পার করতো।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইসমাঈল হোসেন বলেন, এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মাসুমকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অল্প সময়ের মধেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ